Saidur Trainer 2 years ago |
দিন দিন ব্রেন এজিং আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বাড়ছে। ব্রেন এজিং মস্তিষ্কে বার্ধক্য চলে আসাকে বোঝায়। এর প্রধান লক্ষণ হলো স্মৃতিশক্তি কমে যেতে থাকা। এই সমস্যা শুরু হলে মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে। অর্থাৎ ব্রেন শুকিয়ে যেতে থাকে। এই শুকিয়ে যাওয়ার মানে মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলো আস্তে আস্তে অকার্যকর হতে থাকে এবং ব্রেনের আয়তন কমে। কোষের আয়তন কমতে থাকলে মানুষের স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি ও দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে।
কারণ: মস্তিষ্ক যদি কাজ না করে অলসভাবে দিন কাটায়, তাহলে ব্রেন এজিংয়ের প্রক্রিয়াও শুরু হবে অনেক আগে এবং দ্রুত হারে। কিন্তু ব্রেন যদি সক্রিয় থাকে, তাহলে এজিংয়ের প্রক্রিয়া কিন্তু তুলনায় অনেক ধীর গতিতে হয়। যারা অনেক পড়াশোনা করেছেন বা পেশার কারণে পড়াশোনা বা ফিল্ড ওয়ার্কের কাজে যুক্ত রয়েছেন তাদের এজিং প্রসেস দেরিতে শুরু হয়। বংশগত কারণেও ব্রেন এজিং হতে পারে। পরিবারে যদি নিকট আত্মীয়দের মধ্যে অল্প বয়সেই মস্তিষ্কে বার্ধক্য আসার প্রবণতা থাকে তাহলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও এটা সংক্রমিত হতে পারে। আবার মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া এবং হরমোনাল কারণও এজিং প্রসেস প্রভাবিত হয়।
লক্ষণ: ব্রেন এজিংয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষণ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে কোনো ঘটনা, জিনিস বা কারোর নাম, ঠিক সময়ে ঠিক শব্দটা সহজে মনে পড়তে চায় না। এতে বুঝতে হবে মস্তিষ্কের যে জায়গায় শব্দগুলোর ভা-ার, সেখান থেকে ঠিক সময়ে তা বেরিয়ে আসছে না। এরপর দেখা যায় ছোটখাটো কাজ করতে বেশ সমস্যা হয়।
পরবর্তীতে পর্যায়, খুব সাধারণ কাজ যেমন- কোনো একটা জিনিস বিছানা থেকে টেবিলে সরিয়ে রাখা, এগুলো করতেও অসুবিধা হতে পারে। এ ধরনের কাজ খুব সহজ মনে হলেও এতে কিন্তু চোখ, হাত এবং মাথার কো-অর্ডিনেশনের প্রয়োজন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চোখে দেখে বিষয়টা বুঝে হাত দিয়ে জিনিসটা সরিয়ে রাখতে হয়। ব্রেনের কোষগুলো শুকিয়ে যেতে থাকলে এগুলো করতেও বেশ অসুবিধা হয়।
বয়স্কদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় জায়গার জিনিস জায়গায় রাখতে পারছেন না। বই বা চাবি যেখানে থাকে সেখানে না রেখে অন্য কোথাও রাখছেন। এরই সঙ্গে কমে আসে বিচার ক্ষমতা। কখন কী করা উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না। এরই হাত ধরে আসে ডিপ্রেশন। সবার সঙ্গে মেলামেশা বা কর্মক্ষেত্রে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ব্রেনের ক্ষয় যত বাড়তে থাকে এই লক্ষণগুলো ততই প্রকট হতে শুরু করে। মস্তিষ্কের মনে রাখার অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই লক্ষণগুলো আবার দুভাবে দেখা দেয়।
কিছু কিছু অসুখ রয়েছে যাতে সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। যেমন, মাথায় টিউমার, স্ট্রোক, থাইরয়েড, এনকেফেলাইটিস ইনফেকশন জাতীয় অসুখে সাময়িকভাবে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে ভুলে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলোও প্রকাশ পায়। এছাড়া বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব থেকেও সাময়িক স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। মানসিক সমস্যা, অত্যধিক স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, হতাশা থেকেও ভুলে যাওয়া, বিচার করার ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়।
অসুখজনিত কারণে স্মৃতিলোপ হলে তার চিকিৎসা সম্ভব। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে স্মৃতিশক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আবার অসুখের কারণে স্মৃতিলোপ না হলে ভুলে যাওয়ার লক্ষণগুলোকে ব্রেন এজিং বা ব্রেন ডিজেনারেশন বলেই ধরতে হবে। এক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি স্থায়ীভাবে লোপ পায়।
চিকিৎসা: ব্রেন এজিংয়ের সেরকম কোনো চিকিৎসা এখনো নেই। তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এজিং প্রসেসের গতি কমিয়ে দেওয়া সম্ভব। এর জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্যাভাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্রেন এজিং প্রসেস থামানো বা কিছুটা রোধ করা সম্ভব। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন-এ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে দুটো জিনিস সবসময় মেনে চলতে হবে একটি হলো চিনি এড়িয়ে চলা এবং লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েটে থাকা। আর কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্ক সচল রাখা। নিয়মিত নিউরোবিশেষজ্ঞের পরামর্শে থাকা।
Alert message goes here